নবীদের ওয়ারিশ কে.?

নবীদের ওয়ারিশ কে.?

নবীদের ওয়ারিশ কে







মানুষ যখন শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ভুল পথে পরিচালিত হয়। তখন প্রয়োজন হয় এক মোরশেদ বা পথপ্রদর্শকের। সেই পথ প্রদর্শক ছিলেন নবী ও রাসূলগণ। বিভ্রান্ত মানুষ কে নির্ধারিত সহজ সরল পথে ফিরাইয়া আনার জন্য আল্লাহ তা'আলা নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। এই সমস্ত নবী ও রাসূলগণ মানবীয় সর্বস্তরের গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন। তারা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী মানুষদেরকে শান্তি ও সুপথে আহ্বান করতেন। কিভাবে আল্লাহকে পাওয়া যায়, কিভাবে জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, কোন পথে মানুষের কল্যাণ রয়েছে, তারা মানুষকে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।কিন্তু

শয়তানও বসিয়া নাই। মানুষকে দুযোগের উপযোগী করে তোলা যার কাজ, সে কিভাবে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকবে? মানব সৃষ্টির আদিকাল হতে সে যে কর্ম শুরু করেছে তা আজও সমানভাবে চলতেছে, বরং মানব সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাহার কর্ম আরো বেশি চলতেছে। আজ গোটা পৃথিবীর দিকে নজর করলে দেখা যায়, আল্লাহ তাআলার বিশ্বাসের সংখ্যা যত, তারচেয়ে অবিশ্বাস্য সংখ্যা  বহুগুণ বেশি। শুধু তারাই নয়, যারা আজ ও নিজেদের খোদা বিশ্বাসী বলিয়া পরিচয় দেয়, একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তাদের ঈমানের কোন জোর নেই। শয়তান তাদের ওপরও প্রভাব খাটাইয়া তাদেরকে দলে করতেছে এবং আংশিকভাবে হলেও বহুদূর অগ্রসর হয়েছে।

আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর যুগ পর্যন্ত যখনই মানুষের মধ্যে এই অবস্থা দেখা দিত তখনই আল্লাহ তাআলা দয়া পরবশ হইয়া একজন নবী বা রাসূল প্রেরণ করেছেন। কিন্তু নবুওতের জোগাড় নেই। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আবির্ভাব এর সাথে সাথে নবুওয়াত যুগের চির অবসান ঘটেছে।
কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আর কোন নবী বা রাসূল আসবেনা। তাই প্রশ্ন জাগে-- কর্মতৎপরতা যখন বন্ধ হয় নাই এবং দুনিয়ার অসংখ্য অগণিত মানুষ যখন দিশেহারা হইয়া তাহার চক্রান্ত জালে আবদ্ধ হইয়া পড়িতেছে, তখন এই সব বিভ্রান্ত মানুষকে পথ দেখাবার কি প্রয়োজন নেই.? যদি থাকে তবে নবুয়তের দ্বারা চিরতরে রুদ্ধ হইল কেন.?

জবাব এইযে, নবুয়তের দ্বার রুদ্ধ হইলেও উহার আলোকরশ্মি রুদ্ধ হয় নাই। নবীদের যথাযোগ্য ওয়ারিশগণ এখনো প্রতি যুগে আগমন করিয়া থাকেন এবং তারা তাদের প্রদীপ নুরে ঈমানের আলোকে মানুষকে সুপথে পরিচালিত করেন।

আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ। নবী ও রাসূলগণ যে মহাসম্পদ রাখিয়া পৃথিবী হইতে চলে গেছেন, আলেমগণ তাহারেই উত্তরাধিকারী। বাকি নবী ও রাসূলদের পরিত্যক্ত সে মহাসম্পদ কি.? তাদের অনেকেই নিঃস্ব ছিলেন। কোন কোন নবীর মাথা গোঁজার মতো আশ্রয়টুকুও ছিলনা। যাদের কিছু ওবা ছিল তাও তাদের মৃত্যুর পূর্বে অকাতরে নিঃস্ব জনসাধারণকে দান করিয়া গেছেন। তারপরও যদি কিছু থেকে থাকে তবে জনসাধারণের মধ্যে তাহা ভাগ হইয়া গেছেন, কারণ নবীদের পরিত্যক্ত সম্পদের কোন ওয়ারিশ নেই। এমনকি তাদের পুত্রগণ ও উহার উত্তরাধিকার দাবি করতে পারত না। জবাব এইযে নূরে ঈমান ও মানুষকে সৎ পথে পরিচালনার যে সংবিধান তাহার খোদা আল্লাহর নিকট হইতে লাভ করিয়াছেন,  তাহাই সেই মহাসম্পদ। আর আলেমগণই উহার উত্তরাধিকারী। প্রসঙ্গত বলা আবশ্যক, যে পুত্র পিতার আদেশ এর পূর্ণ আস্থাশীল এবং যে উহাকে সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সহিত গ্রহণ করিয়া জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাহার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া চলিয়াছে সেই পুত্র দাবি করতে পারে যে, ''আমি পিতার আদেশ এর উত্তরাধিকারী।'' অন্য তা সে পুত্র পিতার আদর্শ সম্পূর্ণরূপে পালন করি জীবনে চলার পথে উহার অনুসরণ করে নাই সে পিতার উত্তরাধিকারী বলে নিজেকে দাবী করতে পারে না বা করি নাই। অনুরূপভাবে সে আলেম ইলমে দ্বীন হাসিল করা সত্ত্বেও উহার অনুসরণ করে নাই বা তদনুযায়ী আমল করে নাই সে নিজেকে আলেম বানিয়ে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে নবীদের উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য নেই। নবীদের প্রকৃত ওয়ারিশ ঐ সকল আলেম, যাহার নিজের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীর আদর্শ পালন করে থাকেন মারেফাতে এলাহীর সম্পর্কে তাহার সর্বশেষ পরিজ্ঞাত ও তাহাদের অন্তর মহাব্বতে এলাহীর নূরের প্রদীপ্ত। আমরা যে মহামানবের জীবন কাহিনী আলোচনা করতে যাইতেছি তিনি ছিলেন এই  শ্রেণীর আলেম। সাধনা জগতে তিনি ছিলেন উচ্চ পর্যায়ের সাধক। খোদা প্রেম, মারেফাতের রাব্বানী, খেদমতে খালক ওই গুলি ছিল তার জীবনের আদর্শ। যার জন্য আজিও তিনি মানব মনে চির স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। ক্রমে এসব কথা বর্ণনা করি। আল্লাহ তৌফিক দান করুন..!

এই পোস্টগুলি আপনার ভাল লাগতে পারে