হযরত শাহজালালের (রহঃ) শেষ জীবন

হযরত শাহজালালের (রহঃ) শেষ জীবন

হযরত শাহজালালের (রহঃ) শেষ জীবন 





পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন একদিকে যেমন বিখ্যাত তেমনি ধর্মপ্রচারক অপরাধীকে ছিলেন তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী সমাস সংস্কারন জনহিতৈষী মহাপুরুষ। এটাই ছিল তাঁর সবচাইতে বড় পরিচয়। জনসেবা এবং সংস্কার কাজে তিনি নিজেকে এমন ভাবে বিলিয়ে দিতেন যে, তাঁহার ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন কখন আহার করবেন, কখন বিশ্রাম করবেন, কোনটারই নির্দিষ্ট কোন সময় তার ছিল না। তিনি বেশিরভাগ রাত্রি জাগিয়া ইবাদত-বন্দেগী করতেন। সংস্কার মূলত কর্মের মধ্যে প্রধানতম কর্মটি ছিল তার ধর্মনীতির সাথে সমাজনীতি, অর্থনীতি রাজনীতির সমন্বয় সাধন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবন জাপন বিধান ব্যবস্থা, তাই জীবনের সবক্ষেত্রেই চাহিদাই ইসলাম পূরণ করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। আর এই আদর্শ ছিল হযরত মুহাম্মদ সাঃ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের, এটারই অনুসারী ছিলেন হযরত শাহাজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
হযরত শাহাজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিশ্বাস করতেন, পরকালে মুক্তি ও কল্যাণের জন্য এই কাজ একমাত্র নির্ভর। দুনিয়ায় পরকালের শস্যক্ষেত্র। এখান থেকেই ফসল উৎপাদন করিয়া তাহার ফল ভোগ করিতে হইবে পরকালে। তবে এইসব উৎপাদন প্রক্রিয়া হইতে হবে ধর্মসম্মত, ইসলামি ভিখদান অনুযায়ী। আর সে বিধান হল হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপর অবতীর্ণ আল-কোরআন। একই কারণে তিনি ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে কুরআন তথা রাসুলের নীতি কোন পর্যায়ে বাদ দেন নাই। তিনি ইসলাম প্রচারকে শুধু নামাজ-রোজা হজ-জাকাত এবং জিকির-আজকার ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখেন নাই। তিনি ইসলামের নীতির সকল বিষয়ের প্রতি করা ও সতর্ক দৃষ্টি নিবন্ধ রাখতেন, অন্যান্য প্রচারক বিন্দু যারা শুধু এই কাজ গুলির প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকিতেন, তাদেরকে বলা যায়, তারা এতগুলি সমন্বয় ধর্ম প্রচার কাজে ছিলেন অসহায়। ধর্মের এই কাজ তারা অন্যের জিম্মায় একেবারে সরিয়ে নাদিও পুরোপুরি গুরুত্ব দিতেন না। কিন্তু হযরত শাহাজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাহার বিপরীত। তিনি সকল আদর্শ ও ধর্মীয় নীতির উপর সমান গুরুত্ব দান সহকারে ধর্ম প্রচার করতেন। এইজন্যই তার দরবার থাকতো সর্বদা সর্বশ্রেণীর লোকেদের অসম্ভব ভীড়। সামাজিক সালিশ ব্যবস্থা হইত শুরু করিয়া রাজনীতিক বিচার-বিবেচনার কাজ ও তার দরবারে চলিত। তার দ্বারা অনুষ্ঠিত সভা সমিতির, মাহফিল, মিটিংয়ে গুলো একই কারণে অসম্ভব ধরনের ভীড় জমিত। ফলে এতগুলি কাজ পরিচালনা করতে যাইয়া তাহাকে স্বীকার করতে হইতো অসম্ভব পরিশ্রম। এই কারণে তিনি শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।
এমন অবস্থায় চলাকালীন হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক ধর্ম প্রচার কার্যে নিয়োজিত বিভিন্ন স্থানে তার খলিফাদের তরফ হইতে স্থানীয় কোনো অভিযোগ কিংবা অসুবিধার সংবাদ পাইলে তিনি তখন হয় তাহারা স্থান হইতে দূর মারফত সমাধান কিংবা নিজেই সরাসরি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতেন। তাহার অসুস্থ সময় এই প্রকার এক মুসিবতের সংবাদ আসিল বুন্দাশীল নামক স্থান হইতে।  জিয়াউদ্দিন নামক জনৈক খলিফা ছিলেন সেখানে ধর্ম প্রচার কাজে নিয়োজিত। বুন্দাশীল স্থানটি ছিল সুরমা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এই স্থানের লোকদের পানির নিদারুণ কষ্টের সংবাদ আশিয়া পৌঁছিল হযরত শাহজালালের রহমাতুল্লাহ আলাইহির দরবারে। সংবাদ নিয়া এসেছিলেন সেখানকার নিয়োজিত খলিফা জিয়াউদ্দিন। ব্যাপারটি ছিল সুরমা ও বারাক নদীর মধ্যবর্তী এই বুন্দাশীল অঞ্চলটিতে পানির জন্য খনন করা কোন কূপই কার্যকারী হয় না। উভয় নদীর লবণাক্ত পানির কারণে কূপের পানি ব্যবহারের অযোগ্য।
খলিফা জিয়াউদ্দিনের মুখে স্থানীয় লোকদের পানির অভাবের সংবাদ পাইয়া হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহ আলাই আর বসে থাকতে পারলেন না। অসুস্থ শরীর লইয়া তিনি জনাব জিয়াউদ্দিন কে সাথে নিয়ে গমন করলেন বুন্দাশীলে। বুন্দাশীলে গিয়েই তিনি উভয় নদীতে তাঁর পবিত্র হাত দুটি ডুবাইয়া আল্লাহর মহান দরবারে দোয়া ও মোনাজাত করলেন। দেখতে দেখতে নদীর পানির লবণাক্ততা চিরদিনের জন্য অবসান হইয়া গেল এবং পানি সম্পূর্ণরূপে মিষ্টি।
অতঃপর তিনি কিছুদিন বুন্দাশীলতে অবস্থান করলেন। স্থানীয় লোকদের কে অমূল্য উপদেশ ও নসিহত প্রদান করিয়া  নিজ স্থান সিলেট ফিরে আসলেন। তখন তাহার স্বাস্থ্য খুবই ভাঙ্গিয়া পড়িয়েছি,তিনি  খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লে।। 

এই পোস্টগুলি আপনার ভাল লাগতে পারে