হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর পরিক্ষা

হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর পরিক্ষা

 হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর পরিক্ষা





হযরত ইবরাহীম (আ.)-ও একজন বড় নবী অতিবাহিত হয়েছেন। তাঁর পিতার নাম আযর অথবা তারেখ ছিল। সে মাটি এবং পাথরের মূর্তি বানিয়ে বিক্রি করত। আর লােকজন ক্রয় করে ঐ মূর্তিগুলাের উপাসনা করত। হযরত ইবরাহীম (আ.) ছােট বেলা থেকেই খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। এবং প্রতিটি কর্ম ভালােভাবে চিন্তা ভাবনা করে করতেন। (তিনি) একদিন বসে বসে চিন্তা করতে লাগলেন যে, দুনিয়ার মাঝে সাধারণ হতে সাধারণ কোনাে জিনিসই তৈরী করা ব্যতিত নিজে নিজেই তৈরী হয় না। এমনকি মাটির ক্ষুদ্র একটি পিয়ালাও আপনা আপনি তৈরী হতে পারে না। কুমার বানায়, তখন তৈরী হয়। অতএব এই আসমান, মাটি, চন্দ্র, সূর্য, পর্বত এবং সমুদ্র, রং বেরং এর বৃক্ষাদি, লতা পাতা, বিভিন্ন প্রকার পশু, মানুষ এবং জীবজন্তু এগুলো কার সৃষ্টিকৃত। এগুলােরও তাে কোনাে সৃষ্টিকর্তা রয়েছে! আর যদি থেকে থাকে তাহলে সে কে? এবং কোথায় থাকে? তাকে সন্ধান করা দরকার।


হযরত ইবরাহীম (আ.) এই চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। একবার তিনি রজনীতে চন্দ্র উদয় হতে দেখলেন, চন্দ্রটি অনেক বড় এবং অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিল। এ জন্য তাঁর মনে হলাে যে, এটাই খোেদা। এটাই সকল বস্তু সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর যখন এর আলাে ফ্যাকাশে হয়ে যেতে লাগল এবং দেখতে দেখতে চন্দ্রটি নজর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। তখন হযরত ইবরাহীম (আ.) ভাবলেন যে, এটা যদি প্রভু হত তবে নিজেই কেন শেষ হয়ে যেত এবং তার আলাে কেন অবশিষ্ট থাকবে না? কিছুক্ষণ পর যখন সূর্য উদয় হতে দেখলেন, এটা ছিল চন্দ্র থেকে খুব বড়, অনেক সুন্দর এবং অত্যন্ত আলােকিত। তখন তাঁর বিশ্বাস হতে লাগল যে, এটিই প্রভু হবে এবং এটিই সকল পৃথিবী সৃষ্টি করে থাকবে। কিন্তু দুপুরের পর সূর্যের তাপও কমতে লাগলাে এবং সন্ধার সময় তাে একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেল।


তার আলােও ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আর চাদের ন্যায় এটাই দৃষ্টি থেকে আড়াল হয়ে গেল। তখন পুনরায় তাঁর ধারণা পাল্টে গেল যে, না, এটাও প্রভু হতে পারে না! যদি এটা প্রভু হতাে তবে সর্বপ্রথম নিজেকে নিজে হেফাজত করতাে এবং শক্তিশালী থাকত। কিন্তু এটাতাে নিজেকেই হেফাজত করতে পারল না। অবশেষে দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে, এটাও প্রভু নয়। বরং যা কিছু আমরা দেখি বা দেখতে পারি তা প্রভু হতে পারে না। আল্লাহর নূর আমাদের দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে না। আমাদের প্রভু তাে শুধু তিনিই হতে পারেন, যিনি চন্দ্র সূর্য, আসমান এবং যমীন সকল কিছু বানিয়েছেন। তাঁকে আমাদের এই চোখে দেখা যেতে পারে না। তাঁর একথা আল্লাহ তাআলার অনেক পছন্দ হলাে এবং তিনি তাঁকে স্বীয় বন্ধু বানিয়ে নিলেন। যখন হযরত ইবরাহীম (আ.) নবুওয়ত পেলেন তখন তিনি তাঁর পিতা এবং বংশের অন্য লােকদেরকে বুঝালেন যে, তােমরা মানুষের বানানাে মাটি ও পাথরের মূর্তির উপাসনা করাে বরং যিনি আমাদের সকলকে সৃষ্টি করেছেন তাঁরই ইবাদত করব।


ঐ সমস্ত লােক হযরত ইবরাহীম (আ.) -এর কথা একটুও মানলাে না বরং তার শত্রু হয়ে গেল। সে সময়ের বাদশাহ নমরূদ নির্দেশ দিল যে, অনেক লাকড়ি একত্র করে তাতে অগ্নি জালিয়ে দাও এবং হযরত ইবরাহীম (আ.) -এর হাত পা বেঁধে তার মধ্যে ফেলে দাও। অতঃপর তাকে জ্বলন্ত অগ্নিতে ফেলে দেওয়া হলাে। যেহেতু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার প্রিয় নবী ছিলেন, এজন্য আল্লাহ তা'আলা তাঁকে পুড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নিলেন। আর সাথে সাথে আগুন ফুল বাগিচায় পরিণত হয়ে গেল। যার মাঝে হযরত ইবরাহীম (আ.) শান্তিতে শুয়ে রইলেন। লােকেরা যখন এই মুজিযা অবলােকন করল, তখন এটা অবলােকন করে অনেক মানুষ ঈমান নিয়ে এলাে। একবার আল্লাহ তাআলা তাঁর বন্ধু হযরত ইবরাহীম (আ.) কে আবার পরীক্ষা করতে চাইলেন যে, সে তার পুত্রকে বেশী ভালবাসে না আমাকে!


এ জন্য আল্লাহ তা'আলা হযরত ইবরাহীম (আ.) কে স্বপ্নে নির্দেশ করলেন যে, তােমার প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) কে আমার নামে জবেহ করে দাও! এত কঠিন পরীক্ষা ছিল যে, ভালাে থেকে ভালাে কেউ এ জন্য তৈরী হতে পারতাে না! কিন্তু হযরত ইবরাহীম (আ.) এ কাজের জন্যও তৈরী হয়ে গেলেন, তিনি তাঁর ছেলেকেও বললেন যে, এটা আল্লাহ তা'আলার আদেশ। বল তুমি কি আল্লাহ তাআলার নামে জবেহ হতে তৈরী আছাে? তিনি সাথে সাথে বলে উঠলেন, এটাই যদি আল্লাহ তা'আলার মরজি হয়, তবে আমিও সন্তুষ্ট আছি, আপনি এক্ষুণি আমাকে জবেহ করে ফেলুন। হযরত ইবরাহীম (আ.) তাঁর প্রিয় ছেলেকে জবেহ করার জন্য রশি এবং চাকু নিয়ে পর্বতে আরােহন করলেন। এবং তার ছেলের চোখে পট্টি বেঁধে দিলেন, হাত পা বেঁধে তাঁর প্রিয় ছেলেকে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করার জন্য শুইয়ে দিলেন। অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে গলায় চাকু চালাতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। আল্লাহ তা'আলা যখন দেখলেন য়ে আমার বন্ধু সত্যি সত্যিই আমার রাহে তাঁর সন্তান কুরবানী করছে।


তখন আল্লাহ তাআলার (কাছে) হযরত ইবরাহীম (আ.) -এর এই আনুগত্য অনেক পছন্দ হলাে এবং পুরস্কার সরূপ তৎক্ষণাত জান্নাতে হতে একটি দুম্বা পাঠিয়ে দিলেন, যে ইসমাঈল (আ.) কে জবেহ করাে না, তার জায়গায় এই প্রাণী জবেহ করে দাও। সত্যিই তুমি স্বীয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা দ্বিতীয় পুরস্কারের সু সংবাদ ও তাকে শুনিয়ে দিলেন যে, আগামীতে তােমাদেরই বংশের লােকদেরকে দ্বীন এবং দুনিয়ার রাজত্ব দান করব এবং নবী বানাবাে। হযরত ইবরাহীম (আ.) এবং হযরত ইসমাঈল (আ.) আনন্দিত মনে সেখান থেকে নিজ বাড়ীতে ফিরে গেলেন এবং সদাসর্বদা আল্লাহ তাআলার স্মরণে মগ্ন থাকলেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এবং আরাে অনেক বড় বড় নবী এই দুই নবীর বংশ হতেই এসেছেন। (হে আল্লাহ! আমাদেরকেও ঐ সকল সম্মানী ব্যক্তির ন্যায় নিজ নিজ পরীক্ষায় কামিয়াবী দান করুন! আমীন।)

এই পোস্টগুলি আপনার ভাল লাগতে পারে