সাহসিকতার ফল

সাহসিকতার ফল

 সাহসিকতার ফল


মুসলমানদের রাজ্য একজন বড় প্রসিদ্ধ বাদশাহ অতিবাহিত হয়েছেন। যার নাম ছিল আমীর তৈমুর। তিনি ছিলেন অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ একজন সাহসী বীর পুরুষ। তিনি অনেক রাজ্য জয় করেছিলেন। একবার একটি দূর্গে হামলা করে সেটা জয় করতে চাইলেন। কিন্তু জয় হলাে না। তার অনেক সৈন্য নিহত হলাে। কয়েকবার হামলা করে অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু কামিয়াব হতে পারলেন না।


এভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হলাে। সকল সৈন্য ও যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। বাদশাহর বিশ্বাস হয়ে গেল যে, এখন এ কেল্লা বিজয় হবে না। এ জন্য তিনি সিদ্ধান্ত করলেন যে, এ কেল্লা জয় করার জন্য আমি বেশী দিন আর এখানে অবস্থান করব না। বরং নিজ সৈন্যদের নিয়ে স্বদেশে ফিরে যাবাে। কিন্তু আত্মমর্যাদা বােধসম্পন্ন বাদশাহর এ কথার খুব চিন্তা হলাে যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে সব জায়গায়ই কামিয়াব করেছেন, এবং বিজয় দান করেছেন। এখান হতে যদি বিফল হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করি, তাহলে লোকজন কি বলবে? পৃথিবীকে আমি কিভাবে মুখ দেখাব? তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে এ চিন্তাই করছিলেন। হঠাৎ দেয়ালের উপর নজর পড়ল। তখন তিনি দেখতে পেলেন যে, একটি পিপিলিকা একটা বড় দানা মুখে নিয়ে দেয়ালের উপর আরোহণ করতে চাচ্ছে। দানাটি ছিল ভারী।


কিছু উপরে আরোহণ করার পর দানাটি পড়ে গেল। দানাটি নেওয়ার জন্য পিপিলিকাটি আবার নীচে নেমে এলাে এবং ঐ দানা মুখে নিয়ে আবার উপরে উঠতে লাগলাে। কিছুদূর ওঠার পর দানাটি পূনরায় মুখ হতে পড়ে গেল। এভাবে কয়েকবার চেষ্টা করল। প্রত্যেক বারই পিপিলিকা আগের চেয়ে বেশী প্রস্তুতি নিয়ে যেত, আর দানাটি প্রতিবারই পড়ে যেতাে। অবশেষ ২৫/৩০ বার পরে সে কামিয়াব হলাে এবং দানাটি নিয়ে ছাদের উপরে উঠে গেল। পিপিলিকার এই কার্যকলাপ দেখে বাদশাহ খুব আশ্চার্য হলেন। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, যদি এত ছােট একটি কীট নিজের লক্ষ্য এবং ইচ্ছা পূরণে এত দৃঢ় হয় যে, ২৫/৩০ বার পড়ে যাওয়ার পরেও হিম্মত না হারায় তবে আমি এত শক্তিশালী বাদশাহ হয়েও কেন জলদি হিম্মত হারাবাে? এই ভাবনা করতে করতে বাদশাহ মনে মনে সিদ্ধান্ত করলেন যে, এই কেল্লা জয় করেই আমাকে দেশে ফিরে যেতে হবে।


যত দিনই লাগুক আর যতবারই হামলা করতে হােক আমি হিম্মত হারাবাে না। এরূপ চিন্তা করে বাদশাহ পরের দিন খুব জোড়ে শােড়ে নিজেও হামলা করলেন এবং নিজের সকল সৈন্যকেও পূর্ণশক্তি দিয়ে হামলা করার নির্দেশ দিলেন। আল্লাহ তা'আলার কুদরতে সে দিনই বাদশাহ সন্ধ্যা হওয়ার আগে দূর্গ জয় করে নিলেন এবং আনন্দচিত্তে কেল্লায় প্রবেশ করলেন। এভাবে দুনিয়ার মাঝে দূর দূরান্তে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল। এই ক্ষুদ্র একটি পিপিলিকা হতে একটি বড় শিক্ষা এই পাওয়া যায় যে, আমাদেরও কম সাহসী হওয়া উচিত নয় এবং কোনাে কাজ-কর্মে পরিশ্রমকে ভয় পাওয়া উচিত নয়। আমরা যদি স্বীয় কর্মে ভগ্ন অন্তর না হই এবং পরিশ্রমকে ভয় না পাই, তবে ইনশাআল্লাহ আমরাও আমাদের ইচ্ছা পূরণে কামিয়াব হতে পারবাে।

এই পোস্টগুলি আপনার ভাল লাগতে পারে